পিন্ডিকে অবশ্যই আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে উল্লেখ করে বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের অস্তিত্বকে মেনে নেওয়ার ওপর ঢাকা-রাওয়ালপিন্ডির সম্পর্ক নির্ভর করে উল্লেখ করে তিনি বলেন—‘৩০ লাখ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর এধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পর পাকিস্তানে কোনও দফতর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে না।’ বাস্তবতা অনুধাবনের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠাকরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান এবং ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যুদ্ধের পর সেখানে কোনও ফ্যাসিস্ট ছিল না, শুধুই ছিল হিটলারের একনায়কতন্ত্র।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
আজ ঈদ
১৯৭২ সালের এই দিনে ঈদুল আজহা পালিত হয়। এই ঈদ ছিল অন্যরকম। একদিকে নতুন দেশে প্রথম ঈদের আনন্দ। আরেকদিকে স্বজন হারানোর বেদনা তখন পর্যন্ত একইরকম। এরইমধ্যে উৎসব আমেজে দিনটি পার করেন সবাই। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ঈদের নামাজ আদায় করেন আউটার স্টেডিয়ামে। সেখানে মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ ইমামতি করেন। এই প্রথম বাংলা ভাষায় ত্যাগের প্রকৃত আদর্শ কোরবানির তাৎপর্য আলোচনা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ঈদের জামাতে যোগ দেন ধানমন্ডি ময়দানে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী তাকে অভিবাদন জানাতে তার বাসভবনে যান।
এছাড়া, ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের পর জুলফিকার আলী ভুট্টোর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার বিষয়ে তার মতামত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নে মুজিব বলেন, ‘প্রথমে তাদেরকে বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে। স্বীকৃতি দেওয়ার পর দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক হতে পারে।’
ভারতে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক
ঈদের কারণে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি খুব বেশি কার্যক্রম দেখা যায় না। এই দুই দিন পত্রিকাও প্রকাশিত হয়নি। তবে এই সময়টাতে ভারতে গিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মন্ত্রীদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অর্থনৈতিক সাহায্যসহ বাংলাদেশকে যেসব সাহায্য দেবে ভারত তা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, অর্থমন্ত্রী যশবন্ত রাও। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
ঢাকায় মহিলা রিলিফ কমিটির সদস্যরা ‘বাংলাদেশ মহিলা সেবা সংঘ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবিকা দল গঠন করে। এই সেবা সংঘ অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ফিরিয়ে এনে তাদের সন্তানের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভের সব ধরনের সাহায্যের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার নারীকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সবার গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা হয়।
একের পর এক বধ্যভূমি বের হচ্ছে জানুয়ারি মাসজুড়ে। বিজয়ের পর থেকেই শুরু হয় একদিকে যার যার গ্রামে ফেরা, আর স্বজনদের মৃতদেহের খোঁজ। এরইমধ্যে খুলনায় রেলস্টেশন ও শেখ পাড়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার শহীদদের বধ্যভূমি উদ্ধার হয় এই ঈদের মধ্যেই। স্টেশনের পেছনে পরিত্যক্ত জায়গায় কঙ্কালের স্তূপ—হানাদার বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এসব বধ্যভূমি।
সূত্র, বাংলা ট্রিভিউন